প্রকাশিত: Fri, Dec 9, 2022 10:16 PM
আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 3:57 PM

১০ ডিসেম্বর বিএনপি কী করবে?

ফাইজ তাইয়েব আহমেদ: ১০ তারিখ কী হবে? ১০ ডিসেম্বর বিএনপি কী করবে? এইসব প্রশ্নের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছেÑ ১০ তারিখ বা তারপর থেকে নাগরিক হিসেবে আপনি নিজে কী করবেন? দুর্বৃত্তের হাত থেকে রাষ্ট্র পুনরুদ্ধারে আপনার নিজের স্টেইক কী? স্বৈরাচার পুষবেন নাকি গণতান্ত্রিক চর্চার প্রাথমিক ধাপে অর্থাৎ জনতার ম্যান্ডেটে ফিরে যাবার বার্তাটা পরিষ্কার করবেন। নির্যাতক সরকারের ভয়ের বৃত্ত ভেঙে কীভাবে একটা ভোট চোর সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন সেটাই আজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে বারবার, অনেককে লালকার্ড দেখাতে হবে। অবৈধ সরকারের পতনই তাই শেষ গন্তব্য নয়, এটা একটা যাত্রা। 

মানুষ যাতে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিকল্প তৈরি করতে পারে, সেজন্য সজাগ থাকতে হবে। প্লাস যারা আসবে তাদেরও দরকারে লালকার্ড দেখাতে হবে, প্রতিটা অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিবাদহীনতা ছাড়া এমনিতে বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে না, প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে না। সংগঠিত প্রতিবাদের মাধ্যমেই আপনাকে রাষ্ট্রকে ঠিক করার অর্থাৎ সংস্কারের লাইনে উঠাতে হবে। প্রতিবাদহীন দেশে জনতার সরকার তৈরি হয় না, হতে পারে না। এটা আপনি আপনার নিজের জীবনেই সাক্ষী হয়েছেন। আপনি কারণে বা অকারণে, বিকল্প না পেয়ে ফ্যাসিবাদ সমর্থন করেছেন কিংবা মৌন প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু দেশের মানুষের তাতে মঙ্গল আসেনি। কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের সাইনবোর্ড দেখিয়ে দেশের সম্পদ এবং আমাদের ভবিষ্যৎ চুরি হয়েছে। তাই ১০ তারিখের পরে ফ্যাসিবাদ আর পুষবেন কিনা, একদল অনির্বাচিত ডাকাতের হাতে দেশের সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে ছেড়ে রাখবেন কি না, সেটার ফয়সালা করবেন নিজের সাথে, আপনার বন্ধুদের সাথে। 

এই ফয়সালা বা বুঝাপড়াটা ১ দিন, ১ দল কিংবা ১ সমাবেশে হবে না। ১০ তারিখের পরে আমাদের বারবার নামতে হবে। আমাদের শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হবে, অচল ও কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার উৎস হিসেবে থেকে যাওয়া সাংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী তৈরি করা পদ্ধতি, ব্যর্থ অক্ষম ও অকার্যকর সংসদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে আমাদের। এটাই মূল কাজ। ১০ তারিখ একটা দীর্ঘ মুক্তির সম্মিলিত স্বপ্নের শুরু হতে পারে মাত্র। শুরুটাই শুরু করতে হবে আমাদের। গণতন্ত্র মানবাধিকার ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির প্রশ্নে বাংলাদেশ ভয়াবহ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশের বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক মাত্রায় জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকার একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছে। বিগত ১০ বছর ধরে স্থানীয় কিংবা জাতীয় কোনো পরিসরেই প্রকৃত নির্বাচন হচ্ছে না। একদিকে প্রতিযোগিতাহীন এসব নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রসাশন শতভাগ দলীয়ভাবে নিযুক্ত, প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই শাসকদলের প্রার্থীরা টাকা ও ক্ষমতার জোরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছে। 

এমতাবস্থায় গণতন্ত্রহীন স্বৈরাশাসন দ্বারা পরিচালিত দেশে আইনের শাসন, নির্বাচন-সহ বিচারব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। যাকে যেখানে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেই-ই দেশের সম্পদ অকাতরে লুণ্ঠন করছে। একদল দুর্বৃত্তের হাতে দেশের ব্যাংকগুলো সব তুলে দিয়ে অবাধ লুটপাট চলছে। এই অবস্থা থামাতে নাগরিক অংশগ্রহণ জরুরি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নাগরিক অংশগ্রহণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়, ব্যাংকিংখাতের অব্যাহত লুটপাট ও অর্থপাচার বন্ধ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে, ১৭টি এসডিজি গোলকে সামনে রেখে দেশের চলমান ভঙ্গুর উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে টেকসই উন্নয়ন দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, এবং দারিদ্র্য বিমোচনে টেকসই ও জনবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করতে, স্বচ্চ প্রশাসনিক ব্যবস্থা দরকার। এটা বিদেশিরা এসে করে দিয়ে যাবে না। এরজন্য নাগরিক হিসেবে আপনাকেই  বারবার রাস্তায় নামতে হবে। বিষয়টা একদল থেকে ক্ষমতা নিয়ে অন্য দলকে ক্ষমতায়িত করা নয়, বরং বিষয়টা ক্রমাগত আন্দোলন ও সংগ্রামের। আজকে এটা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, তবে আগামীতে এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও দরকার হবে। যখনই জনগণবিরুদ্ধ কাজ চলবে, তখনই আপনাকে প্রতিবাদে শরিক হতে হবে। তাই ভোট চোর, ব্যাংক চোর এবং দেশের সম্পদ পাচারকারী, স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আপনি নাগরিক হিসেবে কিভাবে নিজের অবস্থানটা জানাবেন সেটাই আজ গুরুত্বপূর্ণ। ১০ তারিখ কিংবা তারপর থেকে জালিম সরকারের চলমান অর্থনৈতিক শোষণ ও লুন্ঠন, দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি, উচ্চ কর ভ্যাট শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে, প্রসাশনিক জবাবদিহিহীনতার বিরুদ্ধে, উচ্চ ভাড়া ও প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কিভাবে রুখে দাঁড়াবেন সেই প্রশ্নই মুখ্য। ১০ তারিখ সরকারের পতন হবে না, তবে পতনের শুরটা শুরু হবেÑ এখানে আপনি কিভাবে অংশগ্রহণ করবেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি আপনার নাগরিক অধিকার কীভাবে রাজনীতির কাছে চাইবেন সেটা মুখ্য বিষয়, বাকি সব গৌণ। সংগঠিত জনগণই ইতিহাসের নির্মাতা। ফেসবুক থেকে